রিসেন্টলি ফেইসবুকে দেখলাম বাবা দিবস উদযাপন হইলো ।
মানুষ জনের আবেগ ভালবাসা দেখে ভালই লেগেছে ।
অভিমানী এক বাবার গল্প বলি ।
তখন মিরপুরে থাকি, অফিস বনানী ।
ক্যান্টলমেন্টের ভিতরের বাস গুলা দিয়ে চড়ে মিরপুর-১৪ পর্যন্ত আসলাম ।
গন্তব্য মিরপুর-২ । ইচ্ছা হল একটু প্রাইভেট কারে চড়তে ।
আমার কাছে প্রাইভেট কার মানে তিন চাকা বিশিষ্ঠ পায়ে চালিত রিক্সা ।
রিক্সায় চড়তে চড়তে চালকের সাথে একটু গল্প করা, ভালই জমে আমার ।
যেহেতু একা ছিলাম, তাই খুঁজতে ছিলাম সবার মধ্যে সব থেকে বৃদ্ধ কে ?
চোখ পড়ল ৬৫-৭০ বয়সি এক কাকার দিকে । একটু দূরে একা দাড়িয়ে ।
গিয়ে বললাম, কাকা চলেন । উনার জবাব : বাবা কই যাইবেন ?
মিরপুর-২ নাম্বার, কত দিতে হইবো ?
৭০ টাক চাইল, ভাড়া ৮০ টাকার মত ।
বুঝা গেল, বয়স্ক মানুষ বলে যাত্রী খুব একটা ভিড়ে না তার কাছে । এই যান্ত্রিক শহরে সবাই ইত সময়ের ব্যাপারে খুব সতেচন ।
যাইহোক উঠলাম উনার রিক্সায় ।
পড়নে, চাচার সাদা ছেড়া একটা পাঞ্জাবী । বেশ কয়েক দিক দিয়ে ছেড়াঁ ।
ছেড়াঁ জায়গা গুলা আবার গিট দিয়ে বাধাঁ, সেলাই করা নাহ ।
অনুমান করা গেল চাচী কিংবা কোন মেয়ে মানুষ (মেয়ে/ছেলের বউ) তার সাথে নেই ।
জিজ্ঞেস করলাম, চাচা.. আপনার দেশের বাড়ি কই ??
ময়মনসিংহ, (কি একটা গ্রামের নাম যেন বলেছিল, ভুলে গেছি ) ।
এই রাজধানী শহরে আপনার কত দিন হইল ??
- ছয়-সাত মাস এর মত-অ হইছে ।
আপানার ছেলে মেয়েরা কই ??
এই প্রশ্নটা করেই যেন উনার মনটা খারাপ করে দিলাম ।
.
.
এর মধ্যে অনেক কথা হল ।
এক পর্যায়ে বলল উনার ২ ছেলে ৩ মেয়ে ।
সবাই যার যার মত করে ভাল আছে ।
আমার চোখ বার বার যাচ্ছিল চাচার পাঞ্জাবীর জোড়া-তালি দেয়া ছেড়া অংশ গুলার দিকে ।
কিছু দিন আগেই আমি একটা পাঞ্জাবী নিয়েছিলাম, পাঞ্জাবীটা খুব পছন্দের ছিল আমার ।
২-৩ দিনের মত পড়ে ছিলাম মাত্র । উই মূহূর্তে মনে হচ্ছিল,
পাঞ্জাবীটা যদি উনারে দিতে পারি যতটা আত্মতৃপ্তি পাব, নিজে পড়ে তা আমি কখনোই পাব নাহ ।
জিজ্ঞেস করলাম, চাচা আমার একটা পাঞ্জাবী আছে আপনি নিবেন ?
- নাহ, আমি কেন আপনার পাঞ্জাবী নিব !?
.
.
তারপর আরও অনেক কথা, অনেকটা মিশে গেছি উনার সাথে ।
.
.
এক পর্যায়ে,
কাকা আপনি যদি পাঞ্জাবীটা নেন আমি খুবই খুশি হব ।
- দেও তাহলে, তুমি যদি খুসি হইয়া দিবার চাও ।
চাচা নিতে রাজি হইলো শুনে খুব ভাল লাগা কাজ করতেছিল ।
ততখনে বাসার নিচে এসে গেছি । পাঞ্জাবিটা এনে ওনারে দিই, সাথে একটা পুরাতন শার্টও দিয়েছিলাম ।
বাবা, শোন ।
এই কথা বলে লোকটা আমারে ধরে একদম কেদেই ফেলল ।
(আমারও চোখে পানি জমে গিয়েছিল, চাচাকে বুঝতে দিই নাই ।
আমার জীবনের নিখাঁত ভাল লাগার মূহুর্তের মধ্যে ছিল এটি একটি ।)
চোখ মুছতে, মুছতে বলল আমার বড় ছেলে ব্যাংকে চাকরি করে । ছোট ছেলেটা অনার্স এ পড়ে ।
আমি পেশায় ছিলাম মাছ বিক্রেতা ।
জীবনে তেমন কিছু করতে পারি নাই ছেলে-মেয়েদর জন্য ।
সাধ্যের মধ্যে ছেলে গুলারে পড়াইছি আর মেয়েদের বিয়ে-সাদি দিছি ।
ছেলেদের অনেক অভিযোগ, আমি তাদের জন্যে কি করলাম ??
বড় ছেলে নিজের ইচ্ছেমত ভাল যায়গায় বিয়ে করছে ।
আমার জন্য নাকি তার অনেক জায়গায় লজ্জা পেতে হয় ।
সে সমাজ বজায় রেখে চলতে পারে না আমার জন্য ।
আরও অনেক অভিযোগ আমার ছেলেদের ।
আমার ছেলেরাও বাবা হয়েছে ও হবে, আল্লাহ্ যেন আমার ছেলেদের এমন অভিযোগ না শোনায় ।
ভুক ভরা অভিমান নিয়ে বাড়ি ছেড়ে নি:সঙ্গ ভাবে চলে আসা এক অভিমানী বাবার গল্প ।
অটুট থাকুক শিকড়ের বাঁধন গুলা, ভাল থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা-মায়েরা ।